লন্ডনের অদূরেই সেন্ট আলবান্সে বেশ একটা মধ্যবিধ জীবন কাটছিলো লাজুক ব্যাঙ্ক কর্মচারী জন বাকিংহামের । সুন্দর একটা ঘর, ব্যাংকে চাকরী বা গাড়ি সবই ছিলো, ছিলো না সেসব ভাগ করার কেউ। নিঃসঙ্গ প্রেমহীন জীবন তার। জন ইন্টারনেটে যোগাযোগ করলো রাশিয়ান মেইল–অর্ডার ব্রাইড সার্ভিসে এবং স্থির করলো অবিবাহিত জীবনের ইতি টানতে। স্বপ্নে লালন করা সেই মানুষটার কাছে জনের চাওয়া খুব সামান্য, তাকে রাঁধতে জানতে হবে আর কথা বলতে জানতে হবে জনের ভাষায় ইংরেজিতে। বাঁধ সাধলো সেখানেই! রাশিয়ান নাদিয়া না জানতো রাঁধতে, না জানতো ইংরেজিতে কথা বলতে শুধুমাত্র ‘ইয়েস’ শব্দটি ছাড়া। লাজুক, বিনয়ী জনের ঠিক বিপরীত নাদিয়া। দুজনের ভাষা দুজনের কাছে অচেনা ঠেকলেও খুব বেশি সময় লাগলো না তাদের চেনা গন্ডি পেরিয়ে ভালোলাগায় যেতে।
‘বার্থডে গার্ল’ পরিচালক জেজ বাটারওর্থের দ্বিতীয় ছবি। একদম আন্ডাররেটেড একটা চলচ্চিত্র। পরিচালক হিসেবে ছবিটিতে তিনি পেয়েছেন মিশ্র সমালোচনা। কেউ কেউ বলেছেন এই ধরণের অফবিট ড্রামা আরো বেশি করে স্তুতির যোগ্য, অন্যদিকে কেউ বলেছেন গল্পটা ঠিক জমেনি। গল্পটি টম ও যেজ বাটারওর্থ দুই ভাইয়ের লিখা। প্রযোজনায় ছিলেন আরেক ভাই স্টিভ বাটারওর্থ।
এরপর এলো নাদিয়ার জন্মদিন, জন অনেকটা আয়োজন করে প্রস্তুতি নিলো জন্মদিন পালন করার। হঠাৎ সেই আয়োজনে এসে যোগ হলো আরো দুজন লোক। তাদের একজন নাদিয়ার ভাই (ইয়ুরি) আর অন্যজন তার বন্ধু (এলেক্সি)। জন্মদিন পালন, পুরনো স্মৃতি রোমন্থন, আড্ডা, ক্যামেরায় ছবি তোলা, বনভোজন, নদীতে সাঁতরানো করে সময় কাটছিলো। দু’দিন পর হঠাৎ এলেক্সি অজ্ঞাত কারণে ক্ষ্যাপে ওঠে ইয়ুরি ও জনের সামনে নাদিয়াকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে বসে। এমন অবস্থায় জন নাদিয়াকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ব্যাংক চুরি করে যেখানে সে গত দশ বছর বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করে আসছে।
পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ছে চুরির খবর! জন কি নাদিয়াকে বাঁচাতে পারবে? নাকি গল্প চেনা ছক এড়িয়ে যাবে? কী ঘটবে জন–নাদিয়ার জীবনে?
যারা ছিলেন অভিনয়েঃ
‘জন’ চরিত্রে বেন চ্যাপলিন অসাধারণ। এ চরিত্রে তাকে চূড়ান্ত রকমের বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে পর্দায় পাওয়া যায়। তার কথা বলা, চলাফেরা, অভিব্যক্তি একদম মানানসই। কিন্তু চরিত্র রুপান্তরে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। নিকোল কিডম্যান এ ধরণের অফবিট একটা ছবি কেন করতে গেলেন প্রশ্নটির উত্তর হতে পারে ‘নাদিয়া’ চরিত্রে অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ। অন্তরঙ্গ দৃশ্যেগুলোতে তিনি সাবলীল। অবাক হয়ে আবিষ্কার করতে হয় রাশিয়ান ভাষায় তার নিখুঁত উচ্চারণ! পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধু সেটে বসে রাশিয়ান এমব্যাসির এক ভদ্রমহিলার কাছে ভাষা শিখে ছবিতে এমন উচ্চারণ আনা সত্যি প্রশংসার যোগ্য। ছবিতে ‘এলেক্সি’ চরিত্রে ভিনসেন্ট ক্যাসেলের অভিনয়ও উল্লেখযোগ্য ।
অন্তরায় যে সব কারণঃ
ছবির সবচেয়ে দুর্বল দিক একে কোন নির্দিষ্ট ঘরানায় ফেলা যায় না। তাই এক ঘরানা থেকে অন্য ঘরানায় যেতে একটি চিত্রনাট্যে যে গতির প্রয়োজন পড়ে সেটি ছবিতে পাওয়া যায় না। একই গতি পুরো ছবিতে বজায় ছিল! পাশাপাশি ছবিতে অনেক ‘কারণ’ এর বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা মেলেনা। কোন চরিত্রকেই গুছিয়ে দাঁড় করানো হয়নি। ছবির প্রেক্ষাপট ২০০২ না বলে নব্বই দশক বললে বরং যথার্থ হতো।
পরিচালকসংক্রান্তঃ

পরিচালক জেজ বাটারওর্থ
জেজ বাটারওর্থ মূলত মঞ্চের লোক। পাশাপাশি তিনি একজন চিত্রনাট্য লেখক। তার ক্যারিয়ার শুরু ‘কুকিং ইন অ্যা বেডসিটার’ নাটকে সহ–লেখক হিসেবে। রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে মঞ্চস্থ চতুর্থ নাটক ‘মজো’ লিখার মাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য পান। নোবেল–জয়ী ইংলিশ লেখক হ্যারল্ড পিন্টারের লেখনী দ্বারা তিনি দারুণভাবে প্রভাবিত। তার এখন পর্যন্ত রচিত শেষ নাটক ‘দ্য রিভার’ এর হাত ধরে পান সমালোচকপ্রিয়তা। টিভিতেও কাজ করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে ‘এজ অফ টোমরো’ বা ‘স্পেক্টর’ এর মতো ব্যবসাসফল ছবিতেও কলম ধরেছেন। পরিচালক হিসেবেই সম্ভবত পরিচিত সবচেয়ে কম, পুরো ক্যারিয়ারে কাজ মাত্র দু’টি; চতুর্থ নাটকের নামানুসারে ‘মজো’ (১৯৯৭) এবং ‘বার্থডে গার্ল’ (২০০১) ।
কেন দেখবেনঃ
ধীরলয়ের চিত্রনাট্য আর কিছু অসঙ্গত কারণ সত্ত্বেও ভালো অভিনয়–যোগে ছবিটি উপভোগ্য । সহজ গল্প সহজ পন্থায় উপস্থাপন । ছবির রোমান্টিকতা পুরনো ঢঙে তৈরি, যেখানে নারী থাকবে রহস্যময়ী আর পুরুষ হবে কিঞ্চিত হাবাগোবা টাইপ!
আইএমডিবি লিঙ্ক
রটেন টমাটোজ রিভিউ
